বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা : ধোপে টিকল না নবান্নের আপত্তি। আইপিএস অফিসারদের ডেপুটেশনের পোস্টিং দিয়ে পশ্চিমবাংলা থেকে সরিয়েই দিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্ঘাত আরও তীব্র হল বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। উল্লেখ্য, এই তিন আইপিএস অফিসারই রাজ্যে বিজেপির নিজস্ব কর্মসূচিতে আসা ওই দলের সভাপতি জে পি (জগৎপ্রকাশ) নাড্ডার কনভয়ের দায়িত্বে ছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই পদক্ষেপের পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাটিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। যদিও তাঁর অভিযোগের কোনও জবাবই দেয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বৃহস্পতিবার তিন আইপিএস অফিসারকে বদলি করা নিয়ে ফের রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, রাজ্য সরকার এভাবে আইপিএস অফিসারদের আটকে রাখতে পারে না। তাঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিল্লি গিয়ে হাজিরা দিতে হবে। তাঁদের নতুন পদও দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে তিন অফিসারকে নতুন পোস্টিংও দিয়ে দেওয়া হয় এদিন। অফিসারদের সে কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। ডিআইজি প্রবীণ ত্রিপাঠিকে সরানো হচ্ছে এসএসবিতে। আইটিবিপিতে নতুন পদ পাচ্ছেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) রাজীব মিশ্র এবং ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডেকে নিয়ে যাওয়া হবে পুলিশ রিসার্চ ব্যুরো বা বিপিআরডি–তে।
এর পরই এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর পর তিনবার টুইট করে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি অগ্রাহ্য করে রাজ্যে কর্মরত তিন আইপিএস অফিসারকে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ভারত সরকার। এই নির্দেশ আইপিএস ক্যাডার রুল ১৯৫৪–এর পরিপন্থী। এই ঘটনা রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ এবং পশ্চিমবঙ্গে কর্মরত সরকারি আধিকারিকদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। ভোটের আগে এই ঘটনা আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত হানার প্রয়াস। এটা অসাংবিধানিক এবং অগ্রহণীয়। ঘুরপথে রাজ্যের প্রশাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য কেন্দ্রের এই উদ্যোগ আমরা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেব না। পশ্চিমবাংলা আধিপত্যবাদী, অগণতান্ত্রিক শক্তির সামনে মাথা নোয়াবে না।’
যদিও নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনও কাজ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর বলা আইপিএস ক্যাডার রুল ১৯৫৪–এর পরিপন্থীও নয় কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত। আইএএস বা আইপিএস অফিসারদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাজ্য সরকারকে জানানোটা একটা নিয়ম। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার নো অবজেকশন (এনওসি) সার্টিফিকেট দেয়। না দিলে ওই ঘটনা নিয়ে যদি বিরোধ উপস্থিত হয়, তা হলে সেন্ট্রাল সার্ভিসেস রুল ৬(১) অনুযায়ী রাজ্যের ইচ্ছেকে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় সরকার আইএসএস বা আইপিএস অফিসারদের বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতদিন রাজ্যের সিদ্ধান্তের পর কেন্দ্রীয় সরকার তেমন কড়া পদক্ষেপ করত না। কিন্তু জে পি নাড্ডার কনভয়ে হামলার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে কড়া মনোভাব নিয়েছে, তা বোঝা গেল রাজ্যের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই পশ্চিমবাংলা সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা আইপিএসদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগে ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) প্রবীণ ত্রিপাঠি, দক্ষিণবঙ্গের এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) রাজীব মিশ্র এবং ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডেকে অন্য বিভাগে স্থানান্তরিত করার জন্য রাজ্য সরকারকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ৫ বছরের জন্য তাঁদের ডেপুটেশনে চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে তিন আইপিএস অফিসারকে ছাড়ার ব্যাপারে এনওসি দিতে রাজি হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠির জবাবে রাজ্য সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তিন অফিসারকে ছাড়া যাবে না। এ নিয়ে কেন্দ্রের তরফে প্রোটোকল ভাঙার অভিযোগও তোলা হয়েছিল রাজ্যের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার বোঝা গেল, রাজ্যের বিরুদ্ধে নিজেদের কড়া অবস্থানই নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
যদিও রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মানবে না । সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারে । যদিও নর্থ ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, তা নিয়ে বিশেষ ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার । কেন্দ্রীয় আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তাই আদালতে গিয়ে বিশেষ লাভ হবে না রাজ্যের ।